Garments And Technology M A Kashem
অধ্যায়-১
Garments and Technology
গার্মেন্টস শিল্প
Garments Industry
১.১ গার্মেন্টস শিল্পের ইতিহাস কারিগরি
History of Garments Industry
মানুষের মৌলিক পাঁচটি চাহিদার মধ্যে বস্ত্রের স্থান দ্বিতীয়। অন্ন ছাড়া যেমন বেঁচে থাকা যায় না তেমনি বস্তু ছাড়াও মানব সমাজে বসবাস করা যায় না। মূলত লজ্জা নিবারণ ও প্রাকৃতিক আবহাওয়ার রুক্ষতা থেকে দেহকে রক্ষার জন্যই মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এ সুদীর্ঘ সময়ের জন্য বস্ত্রের প্রয়োজন।
আদিকালে গাছের লতা, পাতা, ছাল এবং পশুর চামড়া দিয়ে মানুষের বস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা মিটানো হতো এবং পরবর্তীতে ধীরে ধীরে আঁশ, মুতা ও কাপড়ের ব্যবহার রপ্ত করে। কবে, কখন এবং কোথায় প্রথম কাপড়ের ব্যবহার আরম্ভ হয় তার সঠিক তথ্য আজও অজানা, তবে একথা সত্য যে, এক সময়ে মানুষ সুই সুতা দিয়ে হাতে সেলাই করে পোশাক তৈরি করত।
ঢোলাই মেশিনের সাহায্যে পোশাক সেলাই করার ইতিহাস মাত্র ২৬০ বছর আগের কাহিনী। সেলাই মেশিনের প্রাচীন ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যে, ১৭৫৫ সালে ইংল্যান্ডের চার্লস ফ্রেডরিক (Charles Frederick) প্রথম যান্ত্রিক সেলাই মেশিন আবির ও প্যাটেন্ট করেন, যা দ্বারা হ্যান্ড ষ্টিচের ডায় স্টিচ উৎপন্ন করা যেত। বাণিজ্যিকভাবে সফল সেলাই মেশিন আবিষ্কৃত হয় ১০৫১ সালে যার আধিবার ইসাক মেরিট সিঙ্গার (Issac Merrit Singer)।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেলাই মেশিন প্রস্তুতকারী হিসেবে বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে নামকরা জাপানের জুকি (Juki) কোম্পানি, ১৯৪৫ সালে জাপানের টোকিওতে স্থাপিত হয় এবং ১৯৪৭ সালে তারা তাদের প্রথম সেলাই মেশিন তৈরি করে।
রেডিমেইড (Read -inade) পোশাক তৈরির ইতিহাস মাত্র ১৮০ বছরের প্রাচীন কাহিনী। ইংরেজি ১৮২৯ সালে ৮০টি সেলাই মেশিন নিয়ে পেরিসে বিশ্বের প্রথম গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি স্থাপিত হয় এবং এ ফ্যাক্টরিতে মিলিটারিদের ইউনিফর্ম তৈরি করা হতো।
সেট ব্রিটেনের লিড্স শহরে ১৮৫৬ সালে জন বেরেন ৩টি সেলাই মেশিন নিয়ে প্রথম গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি চালু করেন। বাংলাদেশের প্রথম গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি স্থাপিত হয় ১৯৬০ সালে ঢাকার উর্দুরোড যার নাম রিয়াজ গার্মেন্টস। প্রাথমিকভাবে বিয়াজ গার্মেন্টস এর উৎপাদিত পোশাক স্থানীয় বাজারে বিক্রয় করা হতো।ইংরেজি ১৯৬৭ সালে রিয়াজ গার্মেন্টস এর উৎপাদিত ১০,০০০ পিস শার্ট বাংলাদেশ হতে সর্বপ্রথম বিদেশে (ইংল্যান্ডে) রপ্তানি করা হয়।
গার্মেন্টস প্রস্তুতকারক ও গার্মেন্টস রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে প্রকৃতপক্ষে ১৯৮১-৮২ সালে ০.১ বিলিয়ন টাকার রেডিমেইড গার্মেন্টস রপ্তানি করে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের পদচারণা আরম্ভ হয়। উক্ত সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গার্মেন্টস শিল্পের তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল না।
অথচ মাত্র ১০ বৎসরের ব্যবধানে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ১৯৯২-৯৩ সালে ১৪৪৫ মিলিয়ন ইউ.এস ডলারে উন্নীত হয় এবং বর্তমানে ২০০৮-২০০৯ সালে ১২৩৪৮ মিলিয়ন ইউ.এস. ডলারে উন্নীত হয়েছে।
বাংলাদেশ হতে ওভেন এবং নিটেড পোশাক রপ্তানির বিগত কয়েক বছরের একটি পরিসংখ্যান নিম্নের ছকে দেখানো হলোঃ
বাংলাদেশের ওভেন এবং নিট পোশাক রপ্তানির তথ্য
বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের শতকরা ৮০ ভাগ আয় হয় তৈরী পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে অর্জন করার জন্য বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাতে হয়েছে পোশাকে প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদেরকে। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির সংখ্যা বৃদ্ধির এবং ফ্যাক্টরিতে কর্মরত জনবল বৃদ্ধির একটি ছক নিম্নে
দেখানো হলো।
ছক 2:সকল পোশাক শিল্প কারখানার সংখ্যা ও কর্মরত জনবলের তথ্য
বাংলাদেশের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে প্রধানত ওভেন শার্ট, টি-শার্ট, ট্রাউজার, জ্যাকেট, জগিং স্যুট, সর্টস, ব্রিফ ইত্যাদি বেশি পরিমাণে তৈরি হচ্ছে। এসব পোশাক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয় তবে মূলত আমেরিকা, কানাডা, ইইসি এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশসমূহে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রপ্তানি করা হয়।
ইউরোপিয়ান দেশসমূহ এবং আমেরিকা বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশী পরিমানে তৈরী পোশাক আমদানি করছে। এই দুইটি বাজারে পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসাবে বাংলাদেশের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে ৪টি পাই চার্ট এর মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পোশাক রপ্তানি কারকদের বিশ্ব বাজারে অবস্হান সম্পর্কে। ধারনা দেওয়া হলো।
Figure 5: Major players in the EU knitwear Market Figure 6: Major players in the US knitwear Market |
Figure 7: Major players in the US Wovenr Market Figure 8: Major players in the UK knitwear Market |
রেডিমেইড গার্মেন্টস রপ্তানির মাধ্যমে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশ উপার্জন করছে তার প্রায় ৮০% বৈদেশিক মুদ্রা পোশাক তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি করার জন্য ব্যয় হয়ে যাচ্ছে।
বর্তমান বাংলাদেশ সরকার পোশাক তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কিছু কিছু কাঁচামাল যেমন- কাপড়, লাইনিং, সেলাই সুতা, বোতাম, জিপার, লেবেল ইত্যাদি দেশের মধ্যেই উৎপাদনের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে আশা করা যাচ্ছে যে অদূর ভবিষ্যতে পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে নেট বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পরিমাণ আরো অনেক গুণ বৃদ্ধি পাবে।
বর্তমানে নিট গার্মেন্টস যেমন টি-শার্ট উৎপাদনকারী গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ও নিটিং মিলের প্রবৃদ্ধি অত্যন্ত লক্ষণীয়। কারণ ইউরোপিয়ান মার্কেটে (ইউ) টি-শার্ট রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে এবং টি-শার্ট রপ্তানির ক্ষেত্রে যথেষ্ট সুযোগও রয়েছে।
বাংলাদেশের রপ্তানির পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে, টি-শার্টের রপ্তানি ১৯৯৪-৯৫ সালে ৩৯৩ মিলিয়ন ইউ এস ডলার থেকে বেড়ে ২০০৮-০৯ সালে ৬৪২৯ মিলিয়ন ইউ.এস ডলারে উন্নীত হয়েছে।
তবে এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, টি-শার্টের মধ্যে তুলনামূলকভাবে কম দামের টি-শার্টগুলো বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে এবং বিদেশ রপ্তানি করছে।
বাংলাদেশের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কর্মরত শ্রমিকেরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কর্মরত শ্রমিকদের চেয়ে অনেক কম পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ • করছে। মাত্র কয়েকটি দেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের মাসিক বেতনের একটি তালিকা নিম্নে
দেখানো হলঃ
গার্মেন্টস শ্রমিকদের মাসিক বেতনের একটি তালিকা |
আমেরিকা এবং ইউরোপিয়ান (২৭) দেশসমূহে উল্লেখযোগ্য পোশাক রপ্তানিকারক দেশসমূহের পোশাক রপ্তানির হার ও অবস্হান সম্পর্কে নিচের ছক আকারে
কিছু তথ্য দেওয়া হলোঃ
বিশ্ববাজারে নিট পোশাক রপ্তানিকারক দেশ সমূহের তালিকা মূলক অবস্থান
ছক ৪: বিশ্ববাজারে ওভেন পোশাক রপ্তানিকারক দেশ সমূহের তালিকামূলক অবস্থান
ছক ৪: বিশ্ববাজারে ওভেন পোশাক রপ্তানিকারক দেশ সমূহের তালিকামূলক অবস্থান
উপরে বর্ণিত ছক-১,২,৩ এবং ৪ এর তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায় যে, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বেশ দ্রুত গতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে তথা বাংলাদেশের অভ্যন্ত রীণ বিবিধ সমস্যার মাঝেও পোশাক শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে এবং বিশ্ব বাজারে পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসাবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
পোশাক শিল্পের উন্নতির সাথে সাথে বস্ত্র শিল্পেরও সম্প্রসারণ হচ্ছে, কারণ পোশাক তৈরী করতে সূতা এবং কাপড় মূল কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া আরো অনেক আনুসাঙ্গিক কাঁচামালেরও প্রয়োজন যেমন বুতাম, ইন্টারলাইনিং পলিব্যাগ, কার্টুন, বোর্ড পেপার, স্কচ টেপ, জিপার ইত্যাদি।
এই সকল কাঁচামাল তৈরী করার জন্য যে সকল শিল্প কারখানার দরকার হচ্ছে ঐ সকল শিল্প কারখানাকে ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ ইন্ডাষ্ট্রি বলে। কিছু ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ ইন্ডাষ্ট্রির বর্তমান অবস্হা নিম্নের ছক-৫ এ দেখানো হলো:
ছক-৫: বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ ইন্ডাষ্ট্রিজ এর তালিকা।
ছক-৫: বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ ইন্ডাষ্ট্রিজ এর তালিকা।
বর্তমান বিশ্বের তথা বাংলাদেশের বিবিধ ঘটনা ও পরিশিতির কারণে ২০১০ সালে বস্ত্র শিল্পের যে অগ্রগতির প্রয়োজন ছিল রাস্তবে তা সম্ভব হয় নাই। বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ ভাগই উপার্জিত হচ্ছে পোশাক ও বস্ত্র খাত হতে, তাই বস্তু এবং পোশাক খাতের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন ছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের পোশাক ও বস্ত্র শিল্পে বর্তমানে কর্মরত জনবলের একটি ধারনা
পোশাক ও বস্ত্র শিল্পে কর্মরত জনবল |
ছক ৬: পোশাক ও বস্ত্র শিল্পে কর্মরত জনবল
বস্তু এবং পোশাক শিল্পে বর্তমানে ৫৬,০০,০০০ জনবল সরাসরি কর্মরত যার ৮০% দরিদ্র এবং অশিক্ষিত মহিলা শ্রমিক। বস্ত্র এবং পোশাক শিল্পের সাথে পরোক্ষভাবে আরো অনেক জনবল এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কযুক্ত যেমন ব্যাংকিং, ইন্সুরেন্স, শিপিং, সি এন্ড এফ. কসমেটিক্স, স্পেয়ার পার্টস ইত্যাদি।
Reference:
Garments And Technology
Dr. Md. Abul Kashem Mia (ডঃ মোঃ আবুল কাশেম মিয়া)
Department of Computer Science and Engineering Bangladesh University of Engineering and Technology Dhaka 1000, Bangladesh
Go To: Part 2- গর্মেন্টস টার্মস ও সংজ্ঞা
Comments
Post a Comment